পয়ামে ইনসানিয়াত পরিচিতি

‘পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশ’ বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তানায়ক ও দার্শনিক আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. প্রতিষ্ঠিত একটি অরাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, আধ্যাত্মিক ও দাওয়াতী সংগঠন এবং নির্ভেজাল মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ব্যক্তি ও সমাজ গড়ার আন্দোলন। এর প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, ‘পাশ্চাত্যের ভোগবাদী জীবনদর্শন মানুষের বাহ্যিক বস্তুগত দিকের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ দেখালেও তাতে আত্মার উন্নতি ও পরিশুদ্ধির কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ মানুষের আত্মাই তার বাইরের সকল কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ভারসাম্য রাখে। আধ্যাত্মিকতার শূন্যতার কারণেই আজ পৃথিবীর এই বিপর্যয়কর অবস্থা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি-মারামারি, জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণ, অন্যের অধিকার হরণ, আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দুর্নিবার নেশা, সাম্রাজ্য বিস্তারের অন্তহীন প্রতিযোগিতা, বিত্ত-বৈভবের সীমাহীন মোহ, দেশপূজা, জাতিপূজা, গোত্রপূজা, স্বার্থপরতা, উগ্রতা, গোঁড়ামী এবং হিংসা-বিদ্বেষে জর্জরিত এ ধরিত্রী। বিশ্ব অতিদ্রুত ধ্বংসের পথে ধাবমান। মানবতা দলে দলে ছুটে চলেছে আত্মহত্যার পথে। এহেন পরিস্থিতিতে মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ হলো— তাদের সামনে সকল সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, গোঁড়ামী, সা¤প্রদায়িকতা, হঠকারিতা এবং সব ধরনের রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সেই পয়গাম তুলে ধরা, যার ওপর মানবতার মুক্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভরশীল এবং যে পয়গাম পশ্চাতে ঠেলে দেয়ার কারণেই আজ গোটা সভ্যতা-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার ও মানব সোসাইটি ভয়াবহ সংকট ও জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে নিমজ্জিত। কী সেই পয়গাম? কী সেই আহবান? সেই পয়গাম নবী-রাসূলগণের পয়গাম, সেই আহবান যুগে যুগে আল্লাহর মনোনীত বান্দাদের আহবান। যাঁরা স্ব স্ব যুগে মানবতার সামনে সেই পয়গাম উপস্থাপন করেছেন এবং তার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছেন। সেই পয়গাম এখনো জীবন্ত। কিন্তু মানুষ্য রচিত বিভিন্ন মতবাদ, রাজনৈতিক দর্শন, বস্তুতান্ত্রিক সংগঠন-সংস্থা এবং কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী সেই পয়গামের সামনে এমন ধুলোর পাহাড় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, যার তলে চাপা পড়ে গেছে নবী-রাসূলগণের সেই আহবান, সেই পয়গাম। কিন্তু বিবেক এখনো মরেনি। মানব মস্তিষ্ক এখনো ভোতা হয়নি। যদি নিঃস্বার্থভাবে সুদৃঢ় বিশ্বাস, অটুট আস্থা ও পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সেই পয়গামকে আবারো প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহীভাবে মানবতার সামনে পেশ করা হয়, তাহলে বিবেক আবার জেগে উঠবে, উঞ্চ অভিনন্দন জানাবে তাবৎ মানবতা।’ এই পয়গাম ও আহবানকে একটি সর্বজনীন সামাজিক আন্দোলনের রূপ দেয়ার জন্য নোবেল পুরস্কারতুল্য মুসলিম বিশ্বের সবচাইতে দামী পুরস্কার ‘শাহ ফয়সাল এ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ী যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী ও দার্শনিক সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫১ সনে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সনের ২৮, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ভারতের ইলাহাবাদে একটি ‘আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন’ এর মাধ্যমে ‘পয়ামে ইনসানিয়াত’ [মানবতার ডাক] নামক সংগঠনটির গোড়াপত্তন করেন।

সংগঠনের মূল্য প্রতিপাদ্য বিষয়

সংগঠনটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন— “আফসোস! বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক ধ্বস ঠেকাতে কোনো সংগঠনকে দেখা যাচ্ছে না। আমরা বহুদিন অপেক্ষা করেছি, অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—যা আছে তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ি।” তিনি আরও বলেন, “এই সংগঠনের বিষয়বস্তু হলো মানবতা ও চরিত্র। বিশ্বমানবতার মাঝে মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতা জাগ্রত করা এবং মানব পরিচয়ে দেশ ও জাতির সেবার চেতনা গড়ে তোলাই এর মূল উদ্দেশ্য।”

সংগঠনের আদর্শ

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন—
‘পয়ামে ইনসানিয়াত মহানবী সা.-এর ‘হিলফুল ফুযূল’ এর একটি অনুসরণ, যা নবুওত প্রাপ্তির পূর্বে তিনি মক্কায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যার গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ ছিলো—‘আমরা দেশের অশান্তি দূর করব, পথিকদের নিরাপত্তা দিব, নিঃস্ব অসহায়দের সাহায্য করব এবং সকল প্রকার জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়-অনাচার ও নৈরাজ্যের অবসান ঘটাবো।

সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

💚

নির্ভেজাল মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলা।

🛡️

ক্রমবর্ধমান সামাজিক, নৈতিক ও মানবিক অধঃপতন রোধ এবং নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ দান করা।

🚫

মাদকতা, নগ্নতা, অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুস্থ্য সংস্কৃতির বিকাশ দান করা।

⚖️

সমাজ থেকে সুদ, ঘুষ, দূর্নীতি, মজুদদারী, কালোবাজারী, সাম্প্রদায়িকতা ও অর্থনৈতিক লুন্ঠনের পথসমূহ নির্মূল করা।

🕊️

সমাজ থেকে সকল প্রকার জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়-অবিচার, হত্যা-রক্তপাত ও হিংসা-বিদ্বেষের অবসান ঘটানো।

🤝

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিঃস্ব, দরিদ্র, বিপদগ্রস্ত ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা।

📘

দেশ, জাতি ও মানবতা রক্ষায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানার্জন, চরিত্র গঠন ও সমাজ সেবার চেতনা জাগ্রত করা

আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)

প্রতিষ্ঠাতা | ‘পয়ামে ইনসানিয়াত’

‘পয়ামে ইনসানিয়াত’-এর প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দাঈ। তিনি ১৯১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের রায়বেরেলীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃ-মাতৃ উভয় দিক থেকেই ছিলেন হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর বংশধর। তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক, চিন্তাশীল এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মনীষী। ১৯৪৩ সালে দারুল উলুম নদওয়াতে শিক্ষক হিসেবে তাঁর ইলমি জীবন শুরু হয় এবং ১৯৬১ সালে তিনি এর রেক্টর নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি “পয়ামে ইনসানিয়াত” আন্দোলনের সাংগঠনিক রূপ দেন, যা মানবতা, নৈতিকতা এবং চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য নিবেদিত। তিনি আরব ও মুসলিম জাহানে বিশেষভাবে সম্মানিত ছিলেন, এবং বহু আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিশ্বজুড়ে দাওয়াতি সফরের পাশাপাশি তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই মহান মনীষী ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জুমআর নামাজের পূর্বে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

Managing Director
Managing Director

ড. শহীদুল ইসলাম ফারুকী

‘পয়ামে ইনসানিয়াত’ বাংলাদেশ এর মুহতারাম আমীর

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত।
এমফিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।
পিএইচডি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া।
শাইখুল হাদীস, দারুল হাবীব মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা।
পরিচালক, মাকাসিদ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ
খলীফা, মুরশিদুল উম্মাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ রাবে' হাসানী নদভী রহ.
খলীফা, মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান (হাফি.)
খলীফা, আল্লামা শাহ সালাহ উদ্দিন নানুপুরী (হাফি.

পয়ামে ইনসানিয়াতের সদস্যদের অঙ্গীকারনামা